আজকে আমরা আলোচনা করবো চাকরি না পাওয়ার কারণ (Main Reasons for not getting a Job). চাকরির প্রত্যাশা সকলেরই। তবে চাকরি নামের সোনর হরিনটি থাকে সবসময়ই ধরাছোয়ার বাইরে।বর্তমান সময়ে বেসরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরি পাওয়া প্রায় সম্ভব। আপনি হয়তো পড়ালেখা শেষ করে বিভিন্ন জায়গায় চাকরির আবেদন করেছেন অথবা সিভি ড্রপ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন। কিন্তু ইন্টারভিউতে ডাক পাচ্ছেন না। আবার ডাক পেলেও ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। আপনার চাকরি না পাবার কারণ কী হতে পারে, সে ব্যাপারে নিজেকে কোন প্রশ্ন করেছেন কি? হয়তো এমন কোন ব্যাপার রয়েছে যার জন্য আপনার চাকরি হচ্ছে না । জ্ঞান অর্জন করুন, প্রত্যেকটা বিষয়ে জানুন এবং নিজের কাছে প্রশ্ন প্রতিনিয়ত করতে থাকুন কেন চাকরি হচ্ছে না । নিজের দুর্বলতা খুজে বের করুন এবং সমাধান করার চেষ্টা করুন ।
আপনি মনে করতে পারেন, “আমি চাকরি পাচ্ছি না, কারণ:
১) তদবিরের জন্য আমার কোন মামা-চাচা নেই।
২) আমি ঘুষ দিই না/দিতে পারছি না।
৩) আমার করার মতো চাকরি তেমন নেই।”
৪) আমি যে বিষয়ে পড়ালেখা করছি তার সাথে চাকরি মেলেনা ।
৫) আমার যোগ্যতার অভাব আছে ।
৬) আমার অভিজ্ঞতা নেই।
এটা অবশ্যই দুর্ভাগ্যজনক যে, বহু চাকরির বেলায় ঠিক হলেও হতে পারে। কিন্তু এ সমস্যাগুলোর সহজ কোন সমাধান নেই। আবার এগুলো সবসময় আসল কারণ নয়।
চাকরির বিজ্ঞপ্তি ঠিকভাবে খোঁজা থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ – বিভিন্ন পর্যায়ে আপনি কী করছেন, তার উপর চাকরি পাওয়া-না পাওয়া নির্ধারিত হয়। বহু ক্ষেত্রে আপনার মানসিকতাও পরোক্ষভাবে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
একজন নিয়োগদাতা যখন একটি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তখন তার কিছু চাওয়া পাওয়া থাকে এবং সে অনুযায়ী সে নিয়োগ করে থাকে এবং নিয়োগ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা ও যোগ্যতা আশা করেন। সে চাকরির জন্য যেসব দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়, সে দায়িত্বগুলো ভালোভাবে পড়লে নিয়োগদাতাদের প্রত্যাশা সম্পর্কে একটা আন্দাজ করা সম্ভব। আন্দাজ করে আপনার যোগ্যতার সাথে যদি মিলে যায় তাহলে আবেদন করবেন। অযথা যেখানে সেখানে আবেদন করলে আপনার আবেদনপত্র বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ধরা যাক, কোন একটি কোম্পানিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে লোক নেয়া হচ্ছে। যদি পুরো বিজ্ঞপ্তির কোন জায়গায় মাইক্রোসফট এক্সেলে দক্ষতার কথা লেখা নাও থাকে, নিয়োগদাতা কিন্তু ঠিকই আপনার সিভিতে এর উল্লেখ দেখতে চান।
বর্তমানে সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে সিভি আর অ্যাপ্লিকেশন বাছাই করা হয়। চাকরির বিজ্ঞপ্তির সাথে সম্পর্কিত শব্দ বা কীওয়ার্ড দিয়ে নিয়োগদাতারা এ ফিল্টারিংয়ের কাজ করেন। তাই সে বিজ্ঞপ্তির সাথে আপনার সিভি বা অ্যাপ্লিকেশনের সামঞ্জস্য না থাকলে প্রাথমিক পর্যায়েই নিশ্চিতভাবে বাদ পড়বেন।
নিজের অজান্তে বা বেখেয়ালে আপনি এমন সিভি বানিয়ে থাকতে পারেন যেখানে –
সিভির মাধ্যমে আপনার ব্যাপারে প্রথম ধারণা পান নিয়োগদাতারা। তাই নেগেটিভ চিন্তাভাবনা সৃষ্টি হলে ইন্টারভিউতে ডাক পাবার সম্ভাবনা কমিয়ে আনবেন।
নিয়োগদাতা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যে যোগ্যতা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা চেয়েছে আপনার ভেতরের সেটা নাই তবুও আপনি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সাথে তাল মিলিয়ে একটি সিভি তৈরি করেছেন এবং আপনি ইন্টারভিউ বোর্ডে ডাক পেয়েছেন দুঃখজনক বিষয় হলো সিভিতে যা কিছু লিখেছেন, তার উপর প্রশ্ন করা হলে বা কোন কাজ দেয়া হলে প্রমাণ দিতে পারবেন কি? না পারলে নিয়োগদাতার আস্থা হারাবেন।
উদাহরণ দেয়া যাক একটা। বহু চাকরিপ্রার্থী সিভির ভাষা দক্ষতা সেকশনে “Good Command of English” লিখে থাকেন। আপনিও লিখেছেন। নিয়োগদাতা যদি পুরো ইন্টারভিউ ইংরেজিতে নেন আর আপনি উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে কিন্তু নেগেটিভ চিন্তাভাবনা সৃষ্টি ।
ভালো প্রস্তুতি না নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে গেলে নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন:
খারাপ প্রস্তুতি নিয়ে কোন ইন্টারভিউতে চমৎকার পারফরম্যান্স করা প্রায় অসম্ভব।
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে সার্টিফিকেটধারী চাকরিপ্রার্থীর অভাব নেই। কিন্তু দক্ষতাসম্পন্ন লোক পেতে এখনো হিমশিম খেতে হয় নিয়োগদাতাদের। .
অধিকাংশই চাকরিপ্রার্থীরা প্রথমদিকে মনে করেন আমার যে কোন একটা চাকরি হলেই হবে কিন্তু কিছুদিন পরে যখন একটা চাকরি হয়ে যায়। এবং চাকরিটা যদি একটু কঠিন হয় ডিউটি টাইম বেশি হয় পরিবেশ যেমন মনে করছিল তেমন না যদি না হয় তবে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে কিছুদিনের মধ্যে চাকরি করতে ভালো লাগেনা। সুতরাং আমি কোন ধরনের চ্কুরী পছন্দ করি ঠিক সে ধারণের বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করায় ভালো হবে এবং ইন্টারভিউ এ ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং যদি চাকরি হয় তবে চাকরি করতে ও ভালো লাগবে ।
এক বারও চিন্তা করে দেখেছেন কি?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার কাছে না থাকলে আপনিও “আমার যেকোন চাকরি হলেই চলবে” চিন্তার ফাঁদে পড়েছেন। ফলে বুঝতে পারছেন না –
সব সময় মনে রাখতে হবে
· কোন ধরনের চাকরির বিজ্ঞপ্তি আপনার খুঁজে দেখা দরকার।
· কোন ধরনের দক্ষতা বাড়ানো উচিত।
· ভালো পরামর্শের জন্য কার কাছে যাওয়া যায়।
নিদৃষ্ট কোন চাকরির পিছনে নাছোড়বান্দার মতো লেগে থাকা একটা বোকা মেয়ে এক্ষেত্রে আপনার দেয়া যাবে না। আয়, সম্মান, নিরাপত্তা আর বাড়তি সুযোগ-সুবিধার বিবেচনায় সরকারি চাকরি নিঃসন্দেহে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় চাকরির ক্যাটাগরিতে পড়ে, বিশেষ করে বিসিএস ক্যাডারের চাকরি। তাই আপনিও হয়তো এর পেছনে সময় দিচ্ছেন। গাইডের পর গাইড মুখস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
কঠিন সত্য হলো, সবার সরকারি চাকরি হয় না। বিসিএস ক্যাডার হিসাবে উত্তীর্ণ হন গুটিকয়েক মানুষ। তীব্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে আপনি অন্য সুযোগ নষ্ট করছেন না তো?
আপনার চারপাশে সরকারি চাকরিজীবীর চেয়ে কিন্তু বেসরকারি পেশাজীবীর সংখ্যা বেশি। ব্যবসা করে সফল হওয়া মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এমনকি বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে অনেকে ভালো উপার্জন করেন। তাদের কারো জীবন কিন্তু নষ্ট হয়ে যায় নি।
সরকারি চাকরি পাবার জন্য ধৈর্য রাখতে পারা ভালো। কিন্তু বয়স ৩০ পার হবার পর সার্টিফিকেট ছাড়া অন্য কোন যোগ্যতা দেখাতে না পারলে বেসরকারি চাকরির রাস্তাও ছোট হয়ে আসবে আপনার জন্য।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে সবসময় আপডেট রাখা এবং আপনি যে কাজ করতে আগ্রহী সেটা সম্পর্কে প্রাক্টিক্যাল না জানলেও থিওরিটিক্যাল জানা প্রয়োজন কারণ আপনি এই সম্পর্কিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করবেন এবং আপনি যদি ইন্টারভিউতে ডাকপান সে ক্ষেত্রে আপনাকে ঐ বিষয়ে প্রশ্ন করবে সুতরাং আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজের সম্পর্কে সব সময় জানুন এবং আপডেট থাকুন।
আপনি মনে করছেন পাঁচ বছর আগে আপনার একটি সিভি তৈরি করা আছে ওই সিভি দিয়ে এখনো পর্যন্ত আবেদন করছেন । আপনি মনে করছেন আমার সিভি আপডেট আছে তবে আপনি পাঁচ বছর আগে যে কাজগুলো যে জিনিসগুলো জানতেন না এখন সেই জিনিসগুলো সে কাজগুলো আপনি পারেন সুতরাং আপনার সিভিতে এই বিষয়গুলো উল্লেখ করুন এবং সবসময় সিভি আপডেট রাখুন।
চাকরির আবেদনের বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে যেমন আপনার মেইলের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন তাছাড়া আপনি বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন আমাদের দেশে বিডি জবস bikroy.com প্রথম আলো জবস বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট আছে আপনি সেখানে গিয়ে একটি একাউন্ট খুলে একাউন্টের মাধ্যমে সহজে আবেদন করতে পারবেন ফ্রিতে।
কথা বলার ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে ভদ্র বা বিনয়ী। কথা বলার স্টাইল বা ধরন পরিবর্তন করতে হবে। কোন ভাবেই ইন্টারভিউ বোর্ডে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। অফিসিয়াল কর্মক্ষেত্রেও ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হতে হবে।
পরিশেষে বলা যায় আপনি যদি ফ্রেসার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার দক্ষতা বাড়ান । প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখুন । টার্গেট করুন কি করবেন কোন চাকরি আপনার পছন্দ, কত টাকা বেতন হলে আপনি চাকরি করবেন, কোন স্থানের চাকরিটা হলে আপনার জন্য ভালো হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো ভেবে চিন্তে আবেদন করবেন এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখবেন তবেই আপনার চাকুরি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।