Labor Laws of Bangladesh এর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছুটি নির্ধারন করা হয়। প্রতিটি শিল্প কারখানা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটি কারখানায় সরকার কর্তৃক ঘোষিত Labor Laws of Bangladesh (শ্রম আইন) ছাড়াও কারখানা কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কিছু নীতিমালা থাকে। এ নীতিমালায় সরকার কর্তৃক ঘোষিত সুযোগ-সুবিধাসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। শিল্প কারখানা সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি পরিকল্পিত নীতিমালা প্রয়োজন। একটি সুষ্ঠ ও পরিকল্পিত নীতিমালার অভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নানান রকম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। একটি বিধিবদ্ধ নিয়ম-নীতির মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হলে সেখানে সুষ্ঠ শ্রম পরিবেশ বজায় থাকে, এতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ফলে প্রতিষ্ঠান খুব সহজেই লক্ষ মাত্র অর্জন করতে পারে। একই সাথে শ্রমিকদের স্বার্থও রক্ষা পায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের ছুটি এবং এ বিষয়ক অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে।
১। সপ্তাহিক ছুটি ধারা- ১০৩
২। নৈনিমত্তিক ছুটি ধারা -১১৫
৩। পিড়া ছুটি ধারা- ১১৬
৪। অর্জিত ছুটি ধারা-১১৭
৫। উৎসব ছুটি ধারা – ১১৮
৬। ক্ষতিপূরণ মূলক সাপ্তাহিক ছুটি ধারা- ১০৪
৭। মাতৃত্ব কালীন ছুটি ধারা- ৪৬
৮। বিনা বেতনে ছুটি বিধি- ৩৮
কোন দোকান অথবা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে বা শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক প্রতি সপ্তাহে সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে একদিন সম্পূর্ণ এবং আধা বেলার/ দেড় দিনের ছুটি নিতে পারবে। কারখানা এবং অন্য প্রতিষ্ঠানে(একই সাথে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায়)একজন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক একটি সম্পূর্ণ দিন (২৪ ঘণ্টা একসাথে কাজ করার পর) ছুটি হিসেবে নিতে পারবে। এই ধরণের ছুটির দিন গুলোর জন্য শ্রমিকের পারিশ্রমিক থেকে কোন কিছু বাদ দেওয়া হবে না। শুক্রবার এবং শনিবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে ধরা হয়। (শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১০৩ এবং ১১৪, সংশোধিত ২০১৩)।
প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে পূর্ণ মজুরীতে ১০ দিনের নৈমত্তিক ছুটি পাইবার হইবেন, এবং উক্তরূপ ছুটিকোন কারণে ভোগ না করলে উহা জমা থাকবে না এবং কোন বৎসরের ছুটি পরবর্তী বৎসরে ভোগ করা যাইবে না। কোন শ্রমিকের হঠাৎ ছুটির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে এ ধরণের ছুটি মঞ্জুর করা হয়ে থাকে। এই ছুটি এক সাথে ০৩ দিনের বেশি মঞ্জুর করা হয় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এর অধিক পরিমাণ ছুটি শ্রমিককে মঞ্জুর করে থাকে। নৈমিত্তিক ছুটির জন্য শ্রমিকেরা পূর্ণ হারে বেতন পেয়ে থাকে।
প্রত্যেক কর্মচারী/শ্রমিক বছরে পূর্ণ বেতনসহ ১০ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ করতে পারবেন নিম্নলিখিত শর্তের উপর-
* নৈমিত্তিক ছুটি ভোগ না করলেও পরবর্তী বছরে এই ছুটি যোগ হবে না। অর্থাৎ প্রতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বর এর পর এই ছুটি বাতিল হয়ে যাবে;
* ছুটিকালীন সময়ের সাথে যদি কোন সাপ্তাহিক ছুটি বা কোন পর্বজনিত ছুটি পড়ে তাহলে তা ঐ ছুটির সাথে যোগ হবে না;
* নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকেই কর্মচারী/শ্রমিকগণ এই ছুটি ভোগ করতে পারবে;
এখানে উল্লেখ্য যে, বার্ষিক ছুটি বা অর্জিত ছুটির ন্যায় নৈমিত্তিক ছুটি বছর শেষে শ্রমিকের হিসাবে জমা থাকবে না। বছর শেষে অভোগকৃত ছুটি (যদি থাকে) আপনা-আপনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
যে সকল শ্রমিক অত্র কারখানায় বা একই মালিকানাধীন বদলীযোগ্য পদে অব্যাহতভাবে ০১ (এক) বছর চাকুরীর মেয়াদ পূর্ণ করেছে তারা পরবর্তী ১২ (বার) মাসের মধ্যে নিন্মোক্ত হারে মজুরীসহ বার্ষিক ছুটি ভোগ করতে পারবেঃ
অনুরূপ মেয়াদের মধ্যে যে অবকাশ বা ছুটি থাকবে তা আলোচ্য ছুটির অন্তর্ভূক্ত হবে। তবে যদি কোন শ্রমিক এ ছুটি আংশিক বা সম্পর্ণ ভোগ না করে তবে তাহা পরবর্তী বৎসরের পাওনা ছুটির সঙ্গে যোগ হবে। শর্ত হচ্ছে যে, প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৪০ (চল্লিশ) দিন এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিকের ক্ষেত্রে ৬০ (ষাট) দিন পর্যন্ত অর্জিত ছুটি জমা থাকবে। উল্লেখিত পরিমাণ ছুটির পর যদি সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের আরও ছুটি পাওনা থাকে তা হলে সেটা তার মওজুদ ছুটির সাথে যুক্ত হবে না।
এ ধরনের ছুটি মঞ্জর বিবরণঃ
সংশ্লিষ্ট শ্রমিক ছুটি শুরুর কমপক্ষে ০২ (দুই) দিন পূর্বে ছুটির আবেদন পত্র জমা করবে। আবেদনপত্র প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছুটি মঞ্জুর করে তাকে অবহিত করবে। যদি কোন বিশেষ কারণে তার আবেদন মঞ্জুর করা না যায়, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি পূর্বাহ্নে সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে অবহিত করা হবে। নিন্মে বর্ণিত কোন কারণে চাকুরীতে ছেদ পড়লেও এ ধারার উদ্দেশ্যে একজন শ্রমিক অব্যাহত চাকুরীর মেয়াদ পূর্ণ করেছে বলে গণ্য হবে।
ক) প্রত্যেক শ্রমিককে বছরে অন্ততঃ ১১ (এগার) দিন (কোম্পানীর নীতিমালার উপর নির্ভরশীল)। পর্ব উপলক্ষ্যে মজুরীসহ অবকাশ মঞ্জুর করতে হবে। অনুরূপ পর্বের দিন ও তারিখ কারখানা মালিক নির্ধারিতব্য পদ্ধতি অনুসারে নির্দিষ্ট করবেন।
খ) পর্ব উপলক্ষ্যে যে কোন অবকাশের দিন হলে শ্রমিককে কাজ করানো যেতে পারে কিন্তু এর বিনিময়ে ৫১ ধারা অনুসারে তাকে পূর্ণ মজুরীসহ ক্ষতিপূরণমূলক ০২ (দুই) দিনের অতিরিক্ত এবং একটি বিকল্প ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
সাধারণ কর্ম সময় হচ্ছে দৈনিক ৮ঘন্টা। প্রতি সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করার পর প্রতিটি শ্রমিক একদিন সাপ্তাহিক ছুটি বা বিশ্রাম পায়। কোন ছুটি বা বিশ্রামের দিনে বিশেষ কারণে যদি কোন শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো হয় তবে তাকে বিষয়টি পূর্বেই অবহিত করা হয়। ছুটি বা বিশ্রামের দিন কাজ করার জন্য তাকে ঐ কাজের পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটি প্রদান করা হয়ে থাকে।
বিধি ১০১ অনুযায়ী-
১) ধারা ১০৩ মোতাবেক কোন শ্রমিককে তাহার প্রাপ্য সাপ্তাহিক ছুটি প্রদান সম্ভব না হইলে উক্ত শ্রমিককে তাহার উক্তরূপ ছুটি প্রাপ্য হইবার পরবর্তী ৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করিতে হইবে;
২) সাপ্তাহিক ছুটি প্রদান না করিয়া কোন শ্রমিককে একাধারে ১০(দশ) দিনের অধিক কাজ করানো যাইবে না;
৩) ধারা ১০৪ এর বিধান অনুযায়ী অব্যাহতিপ্রাপ্ত শ্রমিকগণের প্রাপ্য কোন ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটি প্রাপ্য হইবার পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে প্রদান করিতে হইবে;
৪) শ্রমিকের ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি অনুমোদনের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক উক্তরূপ ছুটির একটি বিজ্ঞপ্তি ধারা ১০৪ মোতাবেক নোটিস বোর্ডে লিখিয়া রাখিবেন;
তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত ছুটির বিজ্ঞপ্তিতে কোন পরিবর্তন আনয়নের প্রয়োজন হইলে সংশ্লিষ্ট ছুটির তারিখের অন্তত ৩ (তিন) দিন পূর্বে উহা করিতে হইবে।
প্রতিষ্ঠানের মহিলা কর্মীদের জন্য নিম্নলিখিত শর্তানুযায়ী মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করে থাকে।
বিনা বেতনে ছুটি বলতে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর অধীনে প্রনীত বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এর বিধি- ৩৮ এ উল্লেখ আছে। উক্ত বিধিতে বলা আছে, কোন মহিলা শ্রমিক প্রসুতি কণ্যান সুবিধা পাওয়ার অধিকারী না হলে তিনি তার জমাকৃত বাৎসরিক ছুটি এবং পীড়া ছুটি ভোগের পর আরও ছুটির প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে বিনা মজুরিতে ছুটি মঞ্জুর করিতে পারিবেন। উক্ত ক্ষেত্র ছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইন বা বিধির আর কোথাও বিনা মজুরীতে ছুটির উল্লেখ নাই।যদি এক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কোন শ্রমিককে বিনা মজুরীতে ছুটি মঞ্জুর করলে উক্ত শ্রমিক তার ছুটির দিন গুলোতে কোন মজুরী বা ভাতা পাবেন না।যদি সংশ্লিষ্ট মহিলা শ্রমিকের দুই বাচ্চা থাকে, তবে তিনি ১১২ দিন কাজে অনুস্থিত থাকার অনুমতি পাবেন কিন্তু পরিশোধ পাবেন উক্ত ১১২ দিনের মধ্যে তার জমাকৃত বাৎসরিক ছুটি এবং পীড়া ছুটি যতদিন থাকবে ততদিনের জন্য। বাৎসরিক ছুটি এবং পীড়া ছুটি প্রদানের পর উক্ত মেয়াদের অবশিষ্ট দিনগুলো বিনা মজুরীতে ছুটি পাবেন।বিনা মজুরীতে ছুটি কালীন কি পরিশোধ করতে হবে সে বিষয়ে আইনে কোন সুনিদিষ্ট দিক নির্দশনা নেই; তবে এক্ষেত্রে বলা যায় একজন শ্রমিক মজুরী পরিশোধ যোগ্য ছুটিতে থাকলে ১১৯ ধারা অনুসারে যে ভাবে পরিশোধ পেতেন, বিনা মজুরীতে হলে সে ক্ষেত্রে উক্ত পরিশোধ আর পাবেন না; অর্থাৎ বিনা মজুরীতে ছুটির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের উক্ত দিনগুলো মোট মজুরী হতে অপরিশোধ যোগ্য হবে। এক্ষেত্রে মোট মজুরী বলতে মূল মজুরী, বাড়ী ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, খাদ্য ভাতা সহ অন্যান্য ভাতাকে বুঝাবে।
পরিশেষে : Labor Laws of Bangladesh বা বাংলাদেশ শ্রম আইনে আরো বেশ কিছু ছুটির উল্যেখ রয়েছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করব। তবে। Labor Laws of Bangladesh বা বাংলাদেশ শ্রম আইনে প্রধানত আট (৮) প্রকার ছুটির বিধান রয়েছে।